Ads block

Banner 728x90px

বইয়ের আলো পাঠশালা বিজয়ের মাস প্রতিযোগিতা (সকল বিভাগ)


গল্প - 

১.

রবিন গুলির সামনে দাড়িয়ে। রবির দিকে ছলছল নয়নে তাকায়।
- তুই আমাকে ছাড়বি না?
- সেদিনের কথা মনে আছে?
রবিন হারিয়ে যায় কয়েকমাস আগের স্মৃতিতে।
মাস দুয়েক হয়েছে, পাকিস্তানিরা আক্রমণ করেছে গ্রামে। বাবা হারা ছেলে রবি আর রবিন। কয়েকদিন হয়েছে মা মারা গিয়েছে। মা বহু কষ্টে, মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে বড় করেছে। পাকিস্তানিদের হাত থেকে বাচঁতে রবিন সিদ্ধান্ত নেয় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেওয়ার। কিন্তু রবির এক কথা, দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা যাবে না। রবি, রবিন একত্রে রাতে খেতে বসেছে। সারাদিন খেটেছে রবিন আর রবি রান্না করেছে।
- বুঝলি রবি, পাশের বাড়ির হাবুলকে পাকিস্তানিরা বাজারে গুলি করেছে।
- আহরে। খালাম্মার কী অবস্থা? কয়দিনই বা হলো বড় ছেলেটা যুদ্ধে মারা গেছে।
- কী আর অবস্থা কেদেঁ কেদেঁ সারা বাজার মাথায় তুলেছে।
- আহরে!
- এই জন্যই বলি, বাচঁতে হলে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিতে হবে। আমি কাল নাম লেখাবো তুই ও চল।
- এতো মানুষ মরেছে। বিনা দোষে। তাও তুমি ওদের হয়ে কাজ করবে? মুক্তি বাহিনীতেও তো যোগ দিতে পার।
- নারে। মুক্তি বাহিনীতে গেলে হাবুলের বড় ভাইয়ের মত মরতে হবে।
- তাই দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে?
- কী দেশ দেশ করিস? নিজের জীবন আগে।
পরেরদিন রবিন রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। রবির সাথে ঝগড়া হয়। শেষে রবি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে, "দেখ তুমি, একদিন সত্য জিতবে। দেশের স্বাধীনতা আসবে।"
রবিন বললো, যা যা। আমি তোর চেয়ে বড়। তোর চেয়ে কম বুঝি না।
দুই ভাই দুই পথে হাটঁতে শুরু করে। রবিন এলাকায় সবার ঘৃণার পাত্র হয়ে ওঠে। লুট ভাঙচুর সব জায়গায় রবিন সবার আগে। তার অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ট হয়ে ওঠে।
রবির সাথে হঠাৎ একদিন দেখা হয়।
- ভাইয়া, তুমি এসব কী করছ?
- কেন?
- ছেড়ে দেও এসব। মানুষকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না। তারা আমাদের স্বদেশী।
- রাখ তোর স্বদেশী। জানিস পাকিস্তানিরা আমাকে কত কী দিয়েছে!
- জানার প্রয়োজন নেই। শুনলে না আমার কথা! তোমাকেও ক্ষমা করা হবে না।
- আরে যা যা। তোকে কে ক্ষমা করে।
রবিন রবিকে আক্রমণে উদ্বুদ্ধ হলে রবি পালিয়ে যায়। রবিন পেছন থেকে চিৎকার করে বলে, মুক্তি বাহিনী ভিতু।
অতীত থেকে বাস্তবে ফেরে রবিন।
- দেখ আমি তোকে ছোট থাকতে কত আদর যত্ন করেছি! আমি বড়ভাই হই তোর!
- এখন তুমি আমার সামনে ভাই নয়, এক রাজাকার।
আর দেরি করল না। দেরিতে মায়া বেড়ে যেতে পারে।
গুলি পাজর ছেদ করে বেরিয়ে যায়। রবিন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
"গ্রামের শেষ বিশ্বাসঘাতক পৃথিবী থেকে চলে গেল। এই গ্রাম বিশুদ্ধ হল। " ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রবি।
১৬ই ডিসেম্বর। স্মৃতিশোধে ফুল দিতে আসে রবি। সেদিনের ঘটনা আজও মনে পড়ে। ভাইয়ের জন্য শোক আর রবিন রাজাকারের জন্য ঘৃণা তার মনে এখনও গেঁথে আছে। কোনো ছেলেমেয়ে দেখলেই বলে, "সবসময় ছোট সিদ্ধান্ত ভুল হয়না, বুঝলে? মাঝে মাঝে বড়রা ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। যেমন নিয়েছিল আমার ভাই। তবে দেশের ঘাতক যেই হোক, কখনো আপস করবে না।"
 
 
 
 
২. (সেলেক্টেড)

ছোটগল্পের নামঃ স্বাধীনতা মানে
লেখায়ঃ ফাতেমা ইসমাইল কেয়া
 
"সময়টা ১৯৭১ সাল। গ্রামের নাম রসুলপুর। এই গ্রামেরই এক যুবক রহিম। পাক বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যোগ্য জবাব দেয়ার। সেদিন চায়ের দোকানে শোনা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনই ছিলো তার মূল অনুপ্রেরণা। আর ঘরে বসে থাকলে চলবে না। এবার রুখে দাঁড়াতে হবে বাংলা মাকে মুক্ত করতে। গ্রামের আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে গোপনে চলে আসে ভারত। ভারতে ৩ মাস প্রশিক্ষণ নেয়া শেষে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গ্রামে ফিরে আসে তারা। প্রতিপক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের ঔদ্ধ্যত্বকে গুঁড়িয়ে দিতে প্রস্তুত রহিম ও তার দল। প্রাণপনে লড়াই করে অবশেষে রসুলপুরকে শত্রুমুক্ত করে তারা। কিন্তু পাকিস্তানী এক সৈন্যের গুলিতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায় রহিমের শরীর। সহকর্মীরা তাকে ধরাধরি করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসে। বাংলার স্বাধীনতার সোনালি সূর্যের দিকে তাকিয়ে রক্তাক্ত মুখে মুচকি হাসি হেসে শহিদ হয় বাংলার বীর সন্তান রহিম।"
এতক্ষণ ধরে টিভিতে 'রহিমের স্বাধীনতা' নামের একটি কার্টুন দেখছিলো মিনু। কার্টুন দেখা শেষ হলে মিনু তার মাকে জিজ্ঞেস করলো,"মা, স্বাধীনতা মানে কি?"
চার বছরের মিনুকে মা কিভাবে বোঝাবে স্বাধীনতা মানে! মা মিনুর নাক চেপে ধরে বললো,"এবার প্রশ্বাস নে।"
- "পারছি না। কষ্ট হচ্ছে। ছেড়ে দাও মা।" মা মিনুর নাক ছেড়ে দিলো।
- "এবার নে।" মিনু প্রাণভরে শ্বাস নিয়ে বললো,"আহ্।"
মা হেসে বললো,"এটাই স্বাধীনতা।"
মিনু খুশিতে নেচে উঠে বললো,"তাহলে তো আমরা সবাই স্বাধীন!"
লুকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো মা, যেন মিনু না জানতে পারে!
.......
১৯৭১ সালে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করলেও সেই স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারি নি আমরা। আর একারনেই আজও মা তার চার বছরের সন্তানকে স্বাধীনতার মানে বুঝাতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয় লুকিয়ে। তাই হয়তো বলা হয়েছে,"স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা রক্ষা করা কঠিন।"
 
 
 
৩. 

গল্পঃ অকুতোভয়ের সংগ্রাম
লেখাঃ মুনিয়া হোসেন
শব্দ সংখ্যাঃ ৩৪৭
 
নদীর পারে বসে আছে শিপু। হাতে থাকা নুড়ি পাথরগুলো একটা একটা করে ছুঁড়ে মারে পুকুরের পানিতে। পুব গাঁয়ে মিলিটারি এসে আস্তানা গেরেছে। গাঁ ছেড়ে সবাই চলে যাচ্ছে সুরক্ষিত জায়গায়। না হলে মিলিটারিরা যাকে পাচ্ছে তাকেই তুলে নিয়ে যাচ্ছে না হয় গুলি করে মেরে ফেলছে। শিপু অবশ্য এসবে ভয় পায় না। কেনো যেন ভয় ওকে ছোঁয় না। আর ভয় কি জন্যই বা পাবে ওর বাবাই তো হাত মিলিয়েছে মিলিটারির সাথে। এই তো সেদিন ভোর রাতের দিকে শিপু লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছে পাশের গাঁয়ের একটা মেয়েকে বাবা জোর করে তুলে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে। পরদিন সকালে মেয়ের মায়ের আহাজারি শুনে শিপুর খুব মায়া হচ্ছিল। কিন্তু সেই বা কি করবে। কিছুই তো নেই তার করার। আসলেই কি কিছু করার নেই?
--" কিরে শিপু তুই একলা এইহানে বইয়া কি করছ?"
কারো ডাক শুনে পিছন ফিরে তাকায় শিপু। বুড়ি দাদি দাঁড়িয়ে আছে। সাথে দাঁড়িয়ে বাড়ির ছোট নাতিন আর ছেলের বউ।
--" বইয়া আছি দাদি। তোমরা কই যাও?"
--" আমরা কলিকাতা চইলা যাইতাছিরে। এইহানে এহন সুন্দরী বউ নিয়া থাকা বিপদ। কারো চোখে পরলে পরে তুইলা নিয়া যাইবো। তহন আমগো কি হইবো! শশুড়ভিটা ছাড়া যাইতে মন চায় না রে। "
বুড়ি দাদি আঁচলে মুখ গুজে কান্নার সুর তুলেন। শিপুর কেনো যেন খুব মায়া হয়।
--" দাদা কই? সে যাইবো না? "
--" না রে। ওই তো যুদ্ধ করতে গেছে। দেশ স্বাধীন করতে গেছে। আমিও কইয়া দিছি দেশ স্বাধীন কইরা না ফিরতে। আমার পোলা মুক্তিযুদ্ধ করবো। আমি যাই রে শিপু। তুই সব দেইখা রাহিস। "
বুড়ি চলে যায়। শিপুর মাথায় মুক্তিযুদ্ধ কথাটি ঘুরপাক খেতে থাকে। গাঁয়ের সবার এই করুণ অবস্থা দেখতে শিপুর আর ভালো লাগে না। শিপু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে বসে সেও যুদ্ধ করবে। নিজের দেশকে স্বাধীন করার জন্য যদি নিজের জীবন দিতে হয় তবে সে তাই দিবে। তবুও সে দেশ স্বাধীন করার যুদ্ধে নামবেই।
একদিন অনেক রাতে শিপু ঘর থেকে বের হয়ে যায়। বাবার অগোচরে যোগ দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের দলে।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়। হাজারো মা হারায় তার ছেলে-মেয়েকে। শিপুদের গাঁ ছেড়ে মিলিটারিরা চলে যায়।
শিপু একটি লাল,সবুজ পতাকা উড়িয়ে সারা পাড়া দৌড় বলতে থাকে - "আমগো দেশ স্বাধীন হইছে,আমরা আইজ থিকা মুক্ত। আমরা এহন স্বাধীন।"
(সমাপ্ত)
 
 
৪. 

গল্প : প্রকৃত বিজয়
লেখা : শানিন হক
শব্দ সংখ্যাঃ ৩৯০
 
প্রাতঃভ্রমণের পর শহীদ মিনার প্রাঙ্গনের একটা বেঞ্চিতে বসে পত্রিকা পড়া আমার রোজকার অভ্যাস।আজ পত্রিকার পাতায় একটু চোখ বুলাতেই আর পড়তে ইচ্ছে করলো না।মনে হচ্ছিলো, খুন-ধর্ষণ-রাহাজানি-দাঙ্গা-দূর্ঘটনার খবরগুলোতে ঠাসা পত্রিকাটা থেকে যেন রক্ত-হিংস্রতা আর শোষিতের আর্তনাদ ঠিকরে বের হয়ে আসছে।পত্রিকাটা বন্ধ করতেই দেখতে পেলাম- শহীদ মিনারের বেদীতে একদল তরুণ ছেলেমেয়ে সশব্দে আড্ডা দিচ্ছে।পাশ্চাত্য পোশাক পরিহিত সেই তরুণদলের জুতোসমেত শহীদ মিনারের বেদীতে বসে 'বাংলিশ' ভাষার কলরব হৃদয়ে ধাক্কা দিয়ে গেলো।আমি ব্যথিত হৃদয় নিয়ে সেস্থান থেকে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম।পথিমধ্যেই দেখতে পেলাম,স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা এবং রণাঙ্গনের সাত বীরশ্রেষ্ঠের চিত্রাঙ্কিত দেয়ালে মূত্রত্যাগ করছেন এক ভদ্রলোক।মুহুর্তেই আমি শিউরে উঠলাম! দেশমাতৃকার এহেন অপমান-ও জীবদ্দশায় দেখতে হচ্ছে? সহসা নিজেকেই ধিক্কার দিলাম।ঊনপঞ্চাশ বছর পূর্বের সেই তেজি বীর জোয়ান আজ কেন এতটা নির্বাক-নির্লিপ্ত হয়ে গেলো?
আজ থেকে ঊনপঞ্চাশ বছর আগের কথা -
তখন ১৯৭১ সাল,সৃষ্টিকর্তা আমাকে দুহাত উজাড় করে সব দিয়েছিলেন।আমি শাফায়েত রেহমান।সেসময় পরিচয় ছিলো: অভিজাত পরিবারের একমাত্র সন্তান, উচ্চশিক্ষিত-বিত্তশালী-সুদর্শন যুবক,পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অফিসার আরো কত কি!দেশজুড়ে যুদ্ধের দামামা বাজছে।শেখ সাহেবের স্বাধীনতার ঘোষণার ঠিক দুদিন আগে আমার দীর্ঘদিনের বাগদত্তার সাথে বিবাহ সুসম্পন্ন হয়।শেখ সাহেবের ঘোষণা শোনামাত্রই বৃদ্ধ পিতা-মাতা আর নববধূকে ফেলে রেখে সেনাকার্যালয়ে পৌঁছে উচ্চপদস্থ পশ্চিম পাকিস্তানী কর্মকর্তার টেবিলে পদত্যাগপত্র ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হনহন করে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম। আজ বুঝতে পারি,সেদিন পদত্যাগপত্রের সাথে ছুঁড়ে ফেলে এসেছিলাম আমার জৌলুসময় জীবন এবং পরিবারকে।তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই আমার। সেই রাতে পাড়ি দিয়েছিলাম এক অজানা গন্তব্যে যার সমাপ্তি ঘটে দীর্ঘ নয় মাস পর।আমি ৩নং সেক্টরের রণাঙ্গনের সম্মুখ সারির মুক্তিযোদ্ধাদের একজন। সেই সুবাদে, খুব কাছ থেকে দেশমাতৃকার পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির এই লড়াইয়ে সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অবদান দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো।তখন মুগ্ধ হতাম এই ভেবে যে,এত বিপদ-অপ্রতুলতা-অমিল থাকার পরও ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-সামাজিক অবস্থান ভেদে সকলে সর্বপ্রকার ভেদাভেদ ভুলে স্বীয় অবস্থান থেকে এগিয়ে এসেছিলেন শুধুমাত্র 'বিজয়' অর্জনের জন্যে। এরাই আমার বাঙালি,আমার বাংলাদেশি!একের পর এক অপারেশনে জয়লাভ করে যখন স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন খবর পেলাম আমার পরিবারের সদস্যরা শহীদ হয়েছেন।শোকবিহ্বল হবার-ও সময় পাইনি সেদিন!শোককে শক্তিতে পরিণত করে শেষ অপারেশনে ছিনিয়ে আনলাম বিজয়;বাংলার আকাশে দেখা দিলো নতুন সূর্যের দিন ।
আমি মুক্তিযোদ্ধা শাফায়েত রেহমান ভীষণ যন্ত্রণা থেকে বলছি - সেদিন তীব্র দেশপ্রেম আর অসীম আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিলো যে রক্তিম বিজয় আজ তা ধূসর হতে চলেছে।আজ সব পেয়েছির দেশে সব হারাতে বসেছি আমরা।আমার বাঙালি যেন আর আমার নেই! স্বাধীন দেশে নিজেদের মানুষের হাতেই প্রতিনিয়ত অপমর্যাদা হচ্ছে নারী-শিশু-মুক্তমনা ব্যক্তিত্ব-মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ মিনার এমনকি, জাতির পিতার!আধুনিকতা আর ঔদ্ধত্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে বাঙালির সমৃদ্ধ ভাষা-শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্য।যেদিন বাঙালি অন্তরাত্মার কলুষতা দূর করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে হৃদয়ে লালন করতে পারবে সেদিন-ই প্রকৃত বিজয় অর্জিত হবে।
 
 
 
৫. 

ক্ষুদে শহিদ (৩০০ শব্দ)
সিয়াম ইসলাম 
 
"আব্বা, যুদ্দে যামু!"
রফিকের কথা শুনে হকচকিয়ে গেলেন রমজান আলী।চেচিয়ে উঠলেন,"ঐ রাহেলার মাও। কই তুমি? হুইনা যাও তোমার পোলা কয় কি?" শাহেদা বেগম রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বললেন, "কি অইসে? চিল্লাও ক্যা?"
রমজান আলী বললেন, "তোমার পোলা কয় যুদ্দে যাব। মাতা নষ্ট অইল নাকি? অরে দেইকা রাইক। মতিগতি বালো না।" এই বলে চলে গেলেন রমজান আলী। শাহেদা বেগম ছেলের কাছে গিয়ে বললেন, "কি অইসে বাপ? তুই কি সত্যি যুদ্দে যাবার চাস?" রফিক উত্তরে বলল, "হ আম্মা। দেহনা, কিবা জুলুম করতাসে আমাগো উপর। পাশের গেরামে হেদিনকা আইয়া মেলা মানুষরে মাইরা হালাইসে। আর কতদিন এবা কইরা থাকমু?" ছেলের কথা শুনে অবাক হলেন শাহেদা বেগম। এই ছেলে বলে কি। সেদিনও না ছোট বাচ্চা ছিল। আজ কি কথা শিখেছে। তিনি বললেন, "বাপ ঠিকাসে। কিন্তু, তুই গেলে আমাগো কি অইব? আমরা কি নিয়া থাকমু? তুই যুদ্দে গিয়া করবিও কি?তুই তো এই টুক্কা পোলা। যা হুইয়া থাক। এইন্যা চিন্তা মাতায় ডুকাবি না।" রফিক চলে গেল ঘরে। শুয়ে পড়ল কাথামুড়ি দিয়ে। কিন্তু ঘুম তো আসে না। একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়, যুদ্ধে যে যেতেই হবে। এই অত্যাচার সহ্য করা যাবে না। সবাই চুপ করে থাকলেও, সে থাকবে না। দরকার হলে জীবন দিয়ে দিবে। এভাবে থাকার থেকে মরে যাওয়া ভালো। শুয়ে শুয়ে প্রহর গুনতে লাগল, কখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে।
ফজরের পর রফিক বাড়ি থেকে পালালো। পুব আকাশে কেবল সূর্য উঠছে। সূর্যের লাল আভায় আলোকিত হচ্ছে গ্রাম। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে এক কিশোর। তার চোখমুখে এক ধরনের কৌতুহল ও অদম্য শক্তি। এ শক্তি জয়ী হওয়ার, এ শক্তি জুলুমের বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র ওঠানোর।
যাওয়ার পথে, শুনতে পেল গাড়ির শব্দ। পেছন ফিরে দেখল পাক বাহিনীর ট্রাক। দেখামাত্র সে দৌড়ে দিল। আস্তে আস্তে শব্দ সামনে এগিয়ে আসছিল। হঠাৎ পিঠে কি যেন বিধল। সুক্ষ্ম ব্যাথাটা ক্রমশ বাড়তে থাকল। হুমড়ি খেয়ে পড়ল রফিক। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে চোখের সামনে ভেসে উঠছে তার মা ও বোনের মুখ। আস্তে আস্তে তাও অস্পষ্ট হয়ে গেল।
 
 
 
৬. 
 
আত্নতৃপ্তির হাসি (৫০৫ শব্দ)
ফারজানা সুমাইয়া
 
মাঝরাতে দরজার কড়াঘাতে ঘুম ভেঙে যায় করিমনের।আজ রাতে এমনিতেই ঘুমাতে দেরি হয়েছে।পাকিস্তান সরকারের কাজে তার স্বামী রহমত সবসময় সবার আগে ছোটে।কাল রাতেও কোনো বিশেষ কাজে সে ছুটে গিয়েছে পাকিস্তানি মিলিটারি ক্যাম্পে।এজন্যই সারাদিন খেটে করিমনকে ৫০ জন মিলিটারির খাবার রান্না করে দিতে হয়েছে।সেসব গুছিয়ে শুতে আসতে প্রায় ১টা বেজে গিয়েছিলো।তাই এতোরাতে আবার দরজায় কড়াঘাতের শব্দে বিরক্তই হয়েছেন তিনি।
-"খালা দরজাটা একটু তাড়াতাড়ি খোলেন।"কন্ঠটা শুনতেই চমকে গেলেন করিমন।এ যে তার একমাত্র বোনের ছেলে আলমের কন্ঠ।কিন্তু আলম এখানে এতোরাতে!ওর তো সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে থাকার কথা।এসব সাতপাঁচ ভেবেই দরজা খুলে দিলেন করিমন।দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢোকে আলম।আলমের সমস্ত শরীরে ছোপ ছোপ পোড়া দাগ আর পা থেকে রক্ত পড়ছে।আলমকে এ অবস্থায় দেখে ভয় পেয়ে যান করিমন।
-"আলম,তোর এ অবস্থা কেনো?আর তুই এখানে?তোর তো ক্যাম্পে থাকার কথা।"
-"খালা গতকাল রাত ১২.৩০ এর কিছু পরে হুট করে আমাদের সহ আশপাশের বেশ কিছু ক্যাম্প ও ঢাকা শহরের অনেক বড় বড় স্থাপনায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।পুরো শহর জুড়ে লুটতরাজ চালাচ্ছে তারা।হাজার হাজার মানুষ বোধহয় মেরেও ফেলেছে।আমি কোনোমতে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি।তবে আসার সময় একজন সেনা কর্মকর্তা আমায় দেখে নিয়েছিলো।তাই সে আমার পায়ে গুলি করেছে।তুমি আজ রাতটা তোমার কাছে আশ্রয় দেও খালা।আমি সকালেই চলে যাবো।"একনাগাড়ে কথাগুলো বলে আলম।আলমের কথা শুনে কেদেঁ দিলো করিমন।
-"তোকে আমি কিভাবে আশ্রয় দিবো?তোর খালু যে পাকিস্তানিদের ডানহাত।সে যদি একবার এসে তোকে দেখে,তোকে জানে মেরে দিবে।আর কোন প্রানে তোকে বের করে দিবো?আমি কি করবো কিছুই বুঝছি না।তারচেয়ে বরং তোকে দুটো শাল দি।কয়েকদিন আগেই তোর খালুকে পাকিস্তানি এক বড় কর্মকর্তা উপহার দিয়েছিলেন কাশ্মির হতে এনে।তুই একটা পায়ে বেধে নে।তাতে রক্ত পড়া কমবে।আরেকটা গায়ে পেঁচিয়ে নে যাতে কেউ না চিনে।দাড়া একটু।"বলে শাল আনতে পা বাড়ালেই তাকে থামিয়ে দেয় আলম।
-"না খালা।যে পাকিস্তানিরা আমাদের মারার জন্য পাগল কুকুরের মতো খুঁজছে,তাদের উপহারকৃত শাল দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করবো?মরতে হয় মরবো।তবুও পাকিস্তানিদের ঘৃনা করেই মরবো।"কথার মাঝেই হঠাৎই করিমনের ঘরের দরজায় কেউ জোরে কড়াঘাত করতে শুরু করে।করিমন আর আলম দুজনেই ঘাবড়ে যান।আচমকা করিমন নিজ গায়ের শাল খুলে আলমকে পেঁচিয়ে দিয়ে ঘরের পিছনের দরজা দিয়ে বের করে দেন।ততোক্ষণে দরজার কড়াঘাত আরো তীব্র হতে থাকে।কানে ভেসে আসে পাকিস্তানিবাহিনীর ও তার স্বামীর অকথ্য গালি।আলমকে বের করেই তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে করিমন।
-"তোর বোনের ছেলে এসেছিলো না এখানে?কই সেই জানোয়ারটা?"রহমতের মুখ থেকে গালি শোনার অভ্যাস থাকলেও তার মুখের উপর কখনো কথা বলেনি করিমন।কিন্তু আজ স্বাধীনতার আকাঙ্খায় সে জীবনে প্রথমবার মুখ খোলে।
-"বলবো না।কি করবেন?মেরে দিবেন?মারেন।তবুও বলবো না আমি।আমি মরে গেলে কারো ক্ষতি হবে না।কিন্তু এমন হাজার হাজার আলম মিলেই গড়ে তুলবে স্বাধীন বাংলা।"বলেই রহমতের মুখে থুথু ছিটায় করিমন।আক্রোশে ফেটে পড়ে রহমত আর পাকিস্তানিরা।করিমনকে সজোরে থাপ্পড় মেরে সেনাবাহিনীদের হাতে তুলে দেয় রহমত।করিমনের আর্তচিৎকারে সমস্ত ঘর কেপেঁ ওঠে।কিন্তু কাপেঁ না মানুষ নামক কিছু পশুর প্রান।এতো কষ্টের মাঝেও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে করিমনের ঠোটেঁর কোণে আত্নতৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে।এক চিলতে আত্নতৃপ্তির হাসি নিয়েই জীবনের মায়া ত্যাগ করেন করিমন।
 
 
 
৭.  

বাবু (৪৩০ শব্দ)
সিয়াম ইসলাম 
 
পাকিস্তানি সেনারা যখন রাবেয়াকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তখন-ই আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন জমির সাহেব। কিন্তু কিছুদিন পর যখন শুনলেন, মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানের ক্যাম্পে আক্রমণ করেছে তখন ছুটে গেলেন তিনি। গিয়ে দেখলেন রাবেয়া মাটিতে পড়ে আছে কোনমতে কোন চাদর দিয়ে শরীরটা ঢাকা, বিভিন্ন জায়গায় আচড়ের দাগ। নিজেকে কোনমতে সামলে নিয়ে বাড়ি নিয়ে আসেন জমির সাহেব। একমাত্র মেয়েকে ফিরে যেন তিনি বাঁচার সম্বল ফিরে পেলেন। তবে, রাবেয়ার ক্ষেত্রে তা পরিলক্ষিত হয় নি। সে কেমন যেন ভয়ে ভয়ে থাকত। কিন্তু, জমির সাহেব মেয়েকে বিয়ে দেবার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। যে করেই হোক চোখ দুটি বুজবার আগে মেয়ের একটি ব্যবস্থা করতেই হবে, দরকার হলে তার সব সম্পত্তি মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে লিখে দিবেন।
একদিন জমির সাহেব বাড়ি এসে দেখলেন, রাবেয়া বমি করে সারা ঘর ভাসিয়ে ফেলেছে। রজিনা বেগম আন্দাজ করেছিলেন কিছু একটা। সেদিন রাতে রজিনা বেগম তাহাজ্জুদ পরে অনেক দোয়া করলেন যেন তার আন্দাজ ভুল প্রমাণিত হয়। পরদিন ও রাবেয়া বমি করল। তখন ফারুক ডাক্তারকে আনা হলে, তিনি কিছু ওষুধ খাইয়ে চলে যান। কিছুদিন পরে রাবেয়ার পেট উঁচু হতে শুরু করে।
কোন এক সকালে রাবেয়া জন্ম দিল এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানকে। সেদিন জমির সাহেব উঠানে বসে কাঁদছিলেন। কিছুক্ষণ পর মুয়াজ্জিন সাহেব এসে বললেন, "চাচা বাচ্চাটা তো নিষ্পাপ। ওর জন্মের পর তো কানে আজানও দেয়া হয়নি। এভাবে বাচ্চাটাকে কষ্ট দেয়া কি ঠিক?" জমির সাহেব ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন, "কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল তা আমি বুঝব, এখন তুমি যাও এখান থেকে।"
রাবেয়া আদর করে ছেলের নাম রাখল বাবু। কেও বাবুকে আদর না করলেও রাবেয়া সবসময় বুকে আগলে রাখত। জমির সাহেব তো কখনও বাবুকে কোলে নেননি। তিনি অনেকবার রাবেয়াকে বলেছিলেন, বাবুর একটা ব্যবস্থা করে দিবেন তিনি। কিন্তু রাবেয়া মানেনি। সে একাই বাবুকে কোলেপিঠে করে মানূষ করতে লাগল।
একদিন রফিক ঘটকও বলল, "বুঝলেন জমির ভাই, সুন্দরী মাইয়ার লেইগা তো আর পাত্রের অভাব হয় না, সমস্যা খালি ওই জারজ বাচ্চাডারে নিয়া।"
বাবুর বয়স এখন ছয়। এখন সে বুঝতে শিখেছে।
তার প্রতি সবার আচরণ তাকে এখন ব্যাথিত করে। বাবু মাঝেমধ্যে কাঁদে। কেন সবাই তার সাথেই খারাপ ব্যবহার করে? তার বাবা নেই কেন, সবার-ই তো বাবা আছে। মাকে জিজ্ঞাসা করলেও কেন মা এড়িয়ে যায়।
একদিন, জমির সাহেব বাসায় এসে দেখলেন, বাবু একা একা উঠানে খেলছে। তার কাছে গিয়ে বললেন, "বাবু, রসগোল্লা খাবি? নে" ভয়ে ভয়ে নেয় বাবু। "বাবু, তোর বাবাকে দেখবি?" জমির সাহেব প্রশ্ন করেন। বাবু বলে, "হ নানা। আমার বাবা কোথায়?" জমির সাহেব বললেন, "কালকে তাহলে স্কুল ছুটির পর মাঠে দাঁড়াবি। আমি তোকে তোর বাবার কাছে নিয়ে যাব। সাবধান! তোর মাকে কিছু বলবি না।" "আচ্ছা নানু"
পরেরদিন ছুটির পর জমির সাহেব বাবুকে নিয়ে রেল স্টেশনে গেলেন। ভালো করে বলে দিলেন, "শোন গুনে গুনে ৭ টা স্টেশন পর নামবি ট্রেন থেকে। দেখবি তোর বাবা দাঁড়িয়ে আছে।" বাবুকে ফার্স্ট ক্লাসের সিটে বসিয়ে জমির সাহেব নেমে পড়লেন। যাওয়ার সময় বাবু বলল" নানু মাকে বল আমি বাবাকে আনতে যাচ্ছি।" ঝাপসা হয়ে এল জমির সাহেবের চোখ। বুঝতে পারলেন তিনি কাজটা ঠিক করেননি। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে প্লাটফর্ম ছেড়ে চলে গেছে।
 
 
 
৮. 

১৯৭১ সাল।চারদিকে ভয়ানক পরিবেশ। বাইরে বের হওয়ার কোনো জো নেই। পাকবাহিনীরা রাস্তায় টহল দিচ্ছে। শুধুমাত্র টুপি পড়া,পাঞ্জাবি পড়া, রাজাকাররা বের হয়।তাঁরা বাঙালী মেয়েদের ধরে নিয়ে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। মুক্তিবাহিনীর যাবতীয় খবরা-খবর পাকবাহিনীর কাছে পাচার করে। এতদিনে রাজাকাররা পাকবাহিনীর সাথে বেশ একটা ভালো সর্ম্পক বাধিয়েছে।
অপরদিকে,উত্তরপাড়ার রহমত আলী সবে মাত্র বিয়ে করেছে।সে খবর কেউ জানে না, আর জানার কথাও না।কারণ দেশের যে অবস্থা, তাতে বেঁচে থাকাটাই দুষ্কর আবার বিয়ে? কিন্তু তাতে কি যৌবন কি আর থেমে থাকে?
পশ্চিমপাড়ার রহিমার সাথে রহমত আলীর বেশ একটা ভাব জমেছে। আজকাল রহমত আলী কে বাড়িতে দেখাই যায় না।রোজ পশ্চিমপাড়ার দিকে ছুটতে দেখা যায়।মাঝে মধ্যে ঝালমুড়ি, কটকটি,চুড়ি, আর ফিতা নিয়েও যেতে দেখা যায় রহমত আলী কে।
এভাবেই রহমত আলী আর রহিমার মধ্যে সম্পর্ক অনেক দুর গড়ায়।এ জগতে রহমত আলী আর রহিমার আপনজন বলতে কেউই নাই।দুজনেই একা।রহিমা ছোট বেলা থেকেই জমিলা বেগমকে খালা বলেই ডাকে আর তাঁর কাছেই থাকে। রহমত আলীর ও কেউ নেই, সে উওরপাড়ার করিম চাচার বাড়িতে রাখালের কাজ করে।
একটা সময় রহমত আলী আর রহিমার সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে করিম চাচা তাদের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।তারপর তিনি ফজলু মিয়াকে বিয়ের আয়োজন করতে বলে।ফজলু মিয়া হচ্ছে করিম চাচার ছোট ছেলে। ফজলু মিয়া জমিলা খালাকে রহমত আলী আর রহিমার সম্পর্কের কথা বুঝিয়ে বলে। জমিলা খালাও এ প্রস্তাবে রাজি হয়।
তখন দেশের অবস্থা ভালো না তাই লোক জানাজানি হওয়ার আগেই করিম চাচা,জমিলা খালা, আর ফজলু মিয়া উপস্থিত থেকে কদমতলী নামক এক গ্রামে নিয়ে গিয়ে রহমত আলী আর রহিমার বিয়ে দেয়।কদমতলী গ্রামে থাকতো জমিলা খালার সতিনের মেয়ে।মুলত তাঁর বাড়িতেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।
কদমতলী গ্রামে এখানো পাকবাহিনী ক্যাম্প করেনি। শুধুমাত্র কদমতলী গ্রামেই বাকি আছে তাছাড়া সব জায়গায় পাকবাহিনী ক্যাম্প করেছে।
করিম চাচা,জমিলা খালা,আর ফজলু মিয়ার ও আর বাড়ি ফেরা হলো না। তাঁরাও রহমত আলী আর রহিমার সাথে কদমতলী গ্রামে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
কারণ,অলরেডি পাকবাহিনী তাঁদের গ্রাম ঘেরাও করে ফেলেছে। এখন চাইলেও আর ফেরা সম্ভব নয়।
জমিলা খালার সতিনের মেয়ে তাদের সবার জন্য থাকার ব্যবস্থা করে। রহমত আলী আর রহিমার জন্য একটা আলাদা রুম দেওয়া হয়।করিম চাচা ও ফজলু মিয়া চলে যায় পাশের পাড়ার আত্মীয়র বাড়িতে। জমিলা খালা আর তার সতিনের মেয়ে চলে যায় রহমত আলী আর রহিমার পাশের রুমে।
দু'দিন পর খবর এলো পাকবাহিনীরা কদমতলী গ্রামকেও ঘেরাও করার জন্য আসছে।সবাই ভয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে। পালানোর পথ নেই, চারদিকে পাকবাহিনী।এমন সময় খবর এলো যুদ্ধে যেতে হবে।করিম চাচা আর ফজলু মিয়া ছুটে আসে রহমত আলীর ঘরে।তাঁরা এসে জানায় বঙ্গবন্ধু র্নিদেশ দিয়েছে আজ রাতেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে।তাই সবাই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে রহমত আলী কোনো দিন দেখে নি,কিন্তু রেডিওতে অনেকবার তাঁর ভাষণ শুনেছে। নতুন বউ ছেড়ে রহমত আলীর যুদ্ধে যেতে যদিও খারাপ লাগছে,কিন্তু কি আর করার,যুদ্ধে যেতেই হবে। বাঁচতে হলে যুদ্ধের কোনো বিকল্প নেই।
রহিমাও রহমত আলীকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দেয়।তাই দেরি না করে রহিমাকে জমিলা খালার কাছে রেখে রহমত আলী যুদ্ধে চলে যায়।রহিমা অপেক্ষায় থাকে রহমত আলীর।দিন যায়,মাস যায়,যুদ্ধও শেষ হয় না,রহমত আলীও আসে না। দেখতে দেখতে প্রায় নয় মাস, যুদ্ধ চলছে।যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রহমত আলীর ও অনেকবার রহিমার কথা মনে পড়েছে। কিন্তু কি আর করার যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফেরার কোনো পথ নেই।
রহমত আলীর কাছে কিছু টাকা ছিল। সেই টাকা দিয়ে রহিমার জন্য কতগুলো নীল চুড়ি কিনে র্শাটের বুক পকেটে রাখে আর মনে মনে ভাবে যুদ্ধ শেষ হলে বাড়ি ফিরে রহিমাকে চুড়িগুলো দিবে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকবাহিনীর তুমুল গোলাগুলি শুরু হয়। গোলাগুলি চলছে তুমুল গোলাগুলি! পাকবাহিনীর আক্রমণ উল্টো মুক্তিবাহিনীর পাল্টা আক্রমণ।
যুদ্ধের এক পর্যায়ে পাকবাহিনীর একটি বুলেট এসে লাগে রহমত আলীর বুকে সঙ্গে সঙ্গে রহমত আলী মাটিতে পরে যায়।রহমত আলীর পকেটে থাকা নীল চুড়ি রক্তে লাল হয়ে যায়।রহমত আলী হাত ইশারায় ডাকে ফজলু মিয়াকে।পকেট থেকে বের করে দেয় রহমত আলীর রক্তে লাল হওয়া নীল চুড়িগুলো। আর আস্তে আস্তে বলে এই চুড়িগুলো রহিমাকে দিও।এই বলে রহমত আলী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
দীর্ঘ নয় মাস পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষ হলো।চারিদিকে বিজয়ের উল্লাস! বাংলার আকাশে বাতাসে বিজয়ের হাওয়া বইছে। যুদ্ধ শেষে করিম চাচা,ফজলু মিয়া সবাই ফিরলো।কিন্তু রহমত আলী আর ফিরলো না!ফিরলো শুধু রহিমার জন্য কেনা রহমত আলীর রক্তে রঞ্জিত লাল চুড়ি।
 
 
৯ (সেলেক্টেড)
 
ক্যাটাগড়ি- গল্প
গল্পের নাম- শেষ চিঠি
লেখায় - মোঃ সাইফুল্লাহ হক
শব্দসংখ্যা- ৫০০
দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় আটমাস হয়ে গেল; তবুও সুজনের কোনো খোঁজ নেই। না কোনো চিঠি এসেছে না কোনো টেলিফোন! একেবারে যেন নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে ।
দেশে গোলযোগ বাঁধার আগে ঢাকাতে থেকে পড়াশোনা করত। এ পাড়ার মকবুলের ছেলে কামালও সুজনের সাথে পড়াশোনা করত। সে গোলযোগ বাঁধার আগেই বাড়ি ফিরে এসেছে। সমির হোসেন খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছে তার কাছে। কিন্তু তাঁকে হতাশ হয়েই ফিরতে হয়েছে। সুজনের কোনো খবরই কামাল জানে না। বহুকষ্টে প্রাণ হাতে নিয়েছে বাড়ি অবধি পৌঁছতে পেরেছে।
সমির হোসেন প্রতিদিন পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করে সুজনের কথা। কেউ সুজনের খবর জানে কি না?
*
সেদিন দুপুরে মতিন মিয়া এসে একটা চিঠি ধরিয়ে দেয় সমির হোসেনের হাতে। বলেছে চিঠিটা নাকি সুজনের! আজ সকালে পোস্ট অফিসে খুঁজে পায় এটা। আটমাস আগের পোস্ট করা। সমির হোসেন চিঠিটা নিয়ে তৎক্ষণাৎ বাড়ির দিকে রওনা দেয়। সুজনের মা-ও যে খবরের জন্য নিদ্রাহীন রাত্রিযাপন করে!
আশাকরি ভালো আছো সবাই!
আমার হাতে সময় খুবই কম। দুর্গম পথের মুসাফির হতে চলেছে তোমাদের সুজন। আমাকে প্রস্তুতি নিতে হবে। তোমরা তো জানই দেশের পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। অবরোধ, মিছিল, সমাবেশ সবকিছু মিলিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। পশ্চিম পাকিস্তানের দু'পেয়ে জানোয়াররা প্রায় ক্ষুধার্ত হায়েনার রূপ ধারণ করেছে। যখন তখন বাঙালির উপর অতর্কিত হামলা করছে। যাকে পাচ্ছে তুলে নিয়ে যাচ্ছে আর নয়তো সেখানেই গুলি করে হত্যা করছে। তাদের ভয়ে স্কুল-কলেজ, হাটবাজার এমনকি রাস্তাঘাটেও মানুষের আনাগোনা নেই। প্রত্যেকটা পরিবার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে দিনাতিপাত করছে। বলতে গেলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন।
আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আর কত নিরীহ মানুষকে অকালে প্রাণ খোয়াতে হবে! আর কত মা-বোনকে সম্ভ্রম হারাতে হবে? তুমিই বলো বাবা!
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়? পরাধীনতার শিকল যে এবার ভাঙতেই হবে! তাই, আমি এক অজানা পথে পাড়ি জমিয়েছি। সত্যিই অজানা পথ। আমি জানি না প্রতি পদে পদে কী অপেক্ষা করছে। আমার সাথে আরও অনেকেই আছে বাবা। তোমার বয়সি, মার বয়সি, এমনকি আমার থেকেও অনেক ছোট ছোট কিশোরও যোগ দিয়েছে। আমরা কেউই জানি না কী ঘটতে যাচ্ছে। তবে, এটুকু জানি- আমরা আমাদের দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছি। নিজের দেশকে দেশের, মাটিকে এবং দেশের মানুষকে বাঁচাতে যাচ্ছি। আর হয়তো কাউকে প্রাণ হারাতে হবে না। কোনো পরিবারকে গুটিসুটি মেরে ঘরে লুকিয়ে থাকতে হবে না। পথের ধারে কিংবা নদীর পাড়ে আর কোনো লাশ পড়ে থাকতে দেখবে না। এবার নিজেদের মাটিতে নিজেদের মতো করে বাঁচতে পারবে!
হয়তো কোনো এক নতুন সূর্যের তীক্ষ্ণ আলোর পরশ মেখে বিজয় নিয়ে ফিরব। তোমরা কোনো চিন্তা করবে না। আর অবশ্যই নিজেদের খেয়াল রাখবে। ওরা ভালো না বাবা! ওরা নির্দয়, পাষণ্ড, বর্বর। দেশ স্বাধীন হলে আবার দেখা হবে। আর নয়তো.......
যদি আর কোনো চিঠি না পাও তাহলে ভেবে নিও তোমার সুজন লাখো সুজনের ভিড়ে মিশে গেছে। জেনে নিও এটাই তোমার সুজনের 'শেষ চিঠি'।
.
চিঠিটা পড়া শেষে ভাঁজ করে পকেটে রেখে দিলেন সমির হোসেন। একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বুকে এক প্রকার ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। সুজনের মা এতক্ষণে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেছে। ছেলে হারানোর কষ্টটা কখনো বলে প্রকাশ করা সম্ভবপর নয়। তিনি বেশ বুঝতে পারছেন, সুজন আর কখনোই ফিরবে না। বাংলা মায়ের দামাল ছেলে হয়ে দেশমাতৃকার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। সত্যিই হারিয়ে গেছে সুজন! সমির হোসেনের চোখ বেয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। এই অশ্রু কষ্টের নাকি গৌরবের তিনি তা বুঝতে পারলেন না!
 
 
 
 

কবিতা - 


১. (সেলেক্টেড)

কবিতার নাম : আমাদের স্বাধীনতায়
লেখকের নাম : মাসুদ রানা তাসিন
 
মনে আছে?
ফিরে আসা আসাদের রক্তভেজা শার্টের কথা।
শ্বাসরুদ্ধকর গণমঞ্চের কাঁপানো ইনশাআল্লাহ শব্দে মুখরিত প্রাঙ্গণ!
পিতার বুকশূন্য করা গুলিবিদ্ধ সন্তানের লাশ,
মায়ের চোখের শ্রাবণের প্লাবনের করুণ ক্ষণ।
মনে আছে?
২৫-শে মার্চের নিরস্ত্র বাঙালির নিদারুণ আর্তনাদ।
নববধূর হাতের মেহেদী না শুকোতেই বিধবা হওয়ার গল্পকথা।
ফায়ারিং স্কোয়াডে সারিবদ্ধ পঁচা লাশের গন্ধ।
পালিয়ে যাওয়া দম্পতির সন্তানের বদলে বালিশ নেওয়ার কল্পকথা।
মনে আছে?
রাজাকার কিংবা শান্তি কমিটির বেঈমানদের কথা।
জ্বালাও, পোড়াও, ধর্ষণ, খুন তাদের নেশা।
পাকিস্তানিদের পা চেটেছে, দেশের করেছে ক্ষতি।
লজ্জা পায়নি, লিপ্ত ছিল ধ্বংসে, মেটাতে তাদের আশা।
মনে পড়ে?
বিনম্র চিত্তে স্মরণ করি, বুদ্ধিজীবী দিবসের।
বাঁচতে দেয়নি ওরা তোমাদের, আমাদের কাছে।
সিংহপুরুষ নির্ভীক বীর, আলো জ্বেলে আসে।
আত্মসমর্পণ করবে তারা, ভয় পেয়ে আছে।
মনে পড়ে?
নয়মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে পরিজন হারানোর ব্যথা।
চারিদিকে বইছে রক্ত, গোলা বারুদের গন্ধ-
কুয়াশাময়, জয়যাত্রায়, দুর্জয়, দুর্বার, দুর্লভ গাঁথা।
পদাঘাতে ভেঙেছে অন্যায়, সব করেছে বন্ধ।
মনে পড়ে?
পার্কের মোড়ে, ঘরে,বাইরে, মাঠে, ঘাটে।
মুজিবের ইনশাআল্লাহ বজ্রধ্বনির মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণকে!
আল্লাহ উপরে রয়েছে বসে, বিচারক ক্ষমতায়।
মহান আল্লাহ শান্তি দিয়েছেন আমাদের স্বাধীনতায়।
 
 
 
২. (সেলেক্টেড)

ওরা সাত বীরশ্রেষ্ঠ
-মুহাম্মদ উসমান
 
স্বাধীনতার খোঁজে আত্মাকে সঁপে হাতে তুলেছো কামান,
দূরন্ত পথ ছুটে চলে, উড়িয়েছো বিজয় নিশান।
হে সূর্য সন্তান, তুমিই বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান।
রক্তিম সূর্যের শপথ নিয়েছো বাঁচাতে বাংলার মান,
যৌথ কন্ঠে স্লোগান তুলে গেয়েছো মুক্তির গান।
হে মহা মানব, তুমিই বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান।
নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে বাজিয়েছো বিজয়ের বীণ,
শত্রুর বিরুদ্ধে খড়গ তুলেছো আনিতে নতুন দিন।
হে সাহসী সৈনিক, তুমিই বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন।
বুলেটের আঘাতে পিছপা হওনি, সবদিক দিয়েছো সামাল
দেশের তরে জীবন দিয়ে হয়েছো রক্তে লাল।
হে মহা নায়ক, তুমিই বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল।
শোষণের বেড়াজাল মুক্ত করে দেখিয়েছো বীরত্বের রূপ,
তোমার দাপটে পাক সেনারা আতঙ্কে দিয়েছে ডুব।
হে মহা বীর, তুমিই বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ।
দীপ্ত তেজে শত্রুকে রুখতে উন্নত করেছো শীর,
মৃত্যুর ভয়কে চূর্ণ করে সেজেছো সংগ্রামী বীর।
হে সাহসী যোদ্ধা, তুমিই বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।
বাংলা মায়ের বস্ত্র ফিরাতে নিয়েছো রক্তিম শপথ,
রাইফেল কাঁধে দেশকে বাঁচাতে শত্রুকে করেছো বদ।
হে মহা প্রলয়, তুমিই বীরশ্রেষ্ঠ নূর মুহাম্মদ।
 
 
৩. 

রক্ত জ্বলা বারুদ গন্ধ ভেসে আসে আমার কাছে
আমি পরাজিত
জননীর বুক খালি করে ছেলে যায় দেশ মাতৃকার কাছে
আমি পরাজিত
বুলেট,ফাঁসি,সব কিছু উপরে ফেলে ছেলে যায় স্বাধীনতা আনতে
আমি পরাজিত
শত নয়, হাজারে নয়,অযুতে নয়,নিযুতে দিল প্রান
আমি পরাজিত
বারুদের গন্ধ উপরে ফেলে এক টুকরো লাল-সবুজ নিয়ে এল মোর কাছে
আমি পরাজিত
স্বাধীন দেশে হেঁটে বেরাই আমি, আমরাই বাংলাদেশ
আমি পরাজিত
 
 
৪.
 
কবিতা: খাপছাড়া বিজয়
কলমে: ফারহানা মীম
সকলে যখন স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালনের জন্য লাল-সবুজ রঙে নিজেদের রাঙায়-
নিজের অজান্তে প্রতিবারই নিজেকে রাঙাই সাদা-কালোয়!
বিজয়ের আনন্দ আমাকে ছুঁতে পারে না-
কেন ঠিক জানি না।
সেই প্রত্যেকটা দিন হয় আমার মন খারাপের দিন!
আমার একলা থাকার দিন!
কুচকাওয়াজ দেখতে মাঠে আমিও যাই।
চারপাশটা খুব খাপছাড়া লাগে!
এতো এতো মানুষের ভীড়েও নিজেকে খুব একা লাগে!
এই আনন্দ উৎসবের মাঝেও যেন কারোর আর্ত চিৎকার কানে খুব বাজে!
জানি, এসব আমার অবচেতন মস্তিষ্কের কারসাজি!
না হলে রাস্তায় শীতে কাঁপতে থাকা অভুক্ত শিশুগুলোর আকুতি কেন কান অবধি পৌঁছায় না?
স্বার্থের কাছে বিজয়ের হাসিটা বড্ড ফিকে ঠেকে...
স্বার্থকে জেতাতে মানবতাকে হারিয়ে ফেলতে হয় প্রতি ২৪ ঘন্টায়!
আমরা এভাবেই জিতি,
জিততে জিততে হারি,
হারাটাকেই নিজেদের বিজয় মনে করি!

 
 ৫.
 
 
 
কবিতা_বঞ্চিত বীরঙ্গনা
কলমে__ মোঃ জাবেদ হোসেন ফাহাদ
তারিখ_২৫/১২/২০২০
 
স্বাধীনতার কথা বলছি আমি,
বলতে পারো কি কেউ?
স্বাধীনতা কি?তাহলে শুনো,
স্বাধীনতার মানে হলো হাজারো
প্রাণ দিয়েছে বিসর্জন!
স্বাধীনতা মানে পাক হায়নার দল
কেড়ে নিয়েছে মা বোনের সম্ব্রম।
স্বাধীনতা মানে কত মায়ের কোল
,করতে হয়েছে খালি দেশের তরে,
স্বাধীনতা মানে দেশের জন্য কত
মা স্বামী সন্তান হারা হয়ে তাঁরা
আজ নির্বিসসহ দিন কাটাচ্ছে!
আমি বঞ্চিত বীরঙ্গনা বলছি শুন
বীরঙ্গনা হয়ে অবহেলায় আমি
এক মুঠো ভাতের জন্য ঘুরছি,
দেখ ভিক্ষার থালা নিয়ে সমাজে
মানুষের ঘরের দুয়ারে দুয়ারে।
এই কি আমাদের স্বাধীনতা মানে?
কি লাভ তাহলে দেশের মাঝে
স্বাধীনতার ৪৯বছর পালন করে?
কি লাভ হল তাদের দেশের জন্য
বাজি রেখে? কি পেয়েছে তারা
এই দেশের কাছে, কিছুই না।
যারা করেছে দেশে সাথে বেইমানি
তাঁরা শান্তিতে ঘুমাচ্ছে বিলাস
বহুল বাড়িতে ক্ষমতার জোড়ে।
সবুজ শ্যামল এই দেশে রক্ত ঢেলে,
লক্ষ প্রাণের অস্তিত্ব বিলীন করে,
ছিনিয়ে এনেছিল যারা যুদ্ধ করে
লাল সবুজের পতাকা দেশে তরে।
অথচ তারাই আজ বঞ্চিত হয়েছে!
হারিয়েছে একটু ভালো করে
বাঁচার অধিকার,হারিয়েছে সব
ক্ষুধায় তাঁরা আজ ধুকে ধুকে মরে।
 
 
৬.
 
কবিতাঃ একুশে ফেব্রুয়ারি
কলমেঃ প্রিয়াংকা সাহা
 
নাড়ছে কড়া ভোর
জলদি খোলো দোর
সূর্য ওঠার আগে
আজকে সবাই জাগে,
তুমিও উঠো তাই
আজকে কুঁড়ে বাদশা হতে নাই।
বিছানা ছাড়ো তুমি
জলদি তাড়াতাড়ি,
আজ আমাদের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি।
তার পাশের ঐ বেদি
চাইছে শুধু ফুল
ফুলের তোড়া হাতে
পথখানি দাও পাড়ি,
আজ আমাদের লাখো শহিদের
রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।
 
 
 
 

চিত্রাঙ্গন - 

 
 
১.
 
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমার প্রিয় বাংলাদেশ। আমাদের রয়েছে সক্রিয় স্বাদের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য রক্ষায় প্রাণ সর্বদাই সচেষ্ট।
 
 
২. 
 
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি 💚
বিজয়'৭১




 
৩. 

মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি।মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।
 
 
 

 
৪. 

সমর্পিতা সম

বিজয়ের আনন্দে মোরা বিজয় নিশান উড়াই 
 
 



৫. 


স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য





৬. 
 
মাধ্যমঃ পেন্সিল
প্রতিযোগী- ফাতেমা ইসমাইল কেয়া
শত সংগ্রামের ফসল হলো আমার বাংলাদেশ।
 
 
 

 
 
৭. (সেলেক্টেড)
 
প্রতিযোগি- মাহমুদা ইয়াসমিন
 
 
 
 
৮. 
 
হাজার মায়ের অশ্রুদিয়ে অর্জিত মোর বাংলা
 

 
 
৯. 

Rose Gerden
বিষয়- চিত্রাঙ্কন
প্রতিযোগী - সানজিদা উর্মি
 
 
 

 
 
১০. 
 
বালুকা বালু
ক্যাপশন: মানচিত্রের বুকে স্থান করে নেওয়া একটি নাম বাংলাদেশ। বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা দেশমাতৃকাকে রক্ষার জন্য প্রাণের মায়া ত্যাগ করে,বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার বিজয় নিশান। তারা অমর,তারা জীবন্ত সর্বদা বাংলার মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়।
[ ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, আশা করছি রিয়েক্ট এবং গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকবেন সবাই ]
 
 
 

 
 
১১.  

Halima Sadia

বিজয়ের উল্লাসে মুখরিত জনতা...🇧🇩





১২. (সেলেক্টেড)
 

Samira Mufsinath


#বিষয়_ চিত্রাংকন
আর্ট :সাদিয়া ইসলাম
বিজয়ের উল্লাস টিকে থাকুক চিরকাল
 
 
 
১৩. 
 
বিজয়ের উল্লাস...💚🇧🇩 
 
 
 
 
১৪.
 
 
 
বিঃদ্রঃ বইয়ের আলো পাঠশালা গ্রুপের সকল মোডারেটরদের মন্তব্য বক্সে মতামত দেয়ার অনুরোধ রইলো। প্রতি বিভাগ থেকে ৫ জন সেরা'কে মন্তব্য'তে বাচাই করে দেয়ার অনুরোধ রইলো।

২টি মন্তব্য:

  1. উত্তরগুলি
    1. সুন্দর তো সবসময়ই। মতামত দিন এখানে। আর আননন না দিয়ে নাম দিয়ে কমেন্ট করুণ। শেষে মোডারেটর যুক্ত করুণ।

      যেমনঃ নাজির হোসেন (এডমিন)

      মুছুন